weather ২৭.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজ বীজ চাষে কোটিপতি সাহিদা

প্রকাশ : ২২-০৪-২০২৫ ১১:৪২

ছবি : সংগৃহীত

ফরিদপুর প্রতিনিধি
সাহিদা বেগমের বয়স ৪৪ বছর। ফরিদপুর পৌরসভার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিনি এখন দেশসেরা কৃষক। ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত জাতের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে পরিচিতি পেয়েছেন সাহিদা।

২০২১ সালে এআইপি হয়েছেন তিনি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি উৎপাদন বা বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প শ্রেণিতে তিনি এ সম্মান পেয়েছেন। ২০২০ সালে তিনি অনন্যা শীর্ষ দশ নির্বাচিত হন। একই বছর দেশের সেরা কৃষক হিসেবে পেয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ডসহ নানা স্বীকৃতি।

ফরিদপুর কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকারী কৃষকদের তালিকায়ও তিনি সেরা। চলতি বছর তিনি পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন কমপক্ষে চার কোটি টাকার। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে সাহিদা বেগমের আয় হয়েছে তিন কোটি টাকার মতো।

সাধারণ আর পাঁচটি গৃহিণীর মতোই ছিল তার জীবন। পড়ালেখা করেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। গৃহিণী তকমা পেছনে ফেলে তিনি এখন সফল নারী কৃষক। দেশে কৃষিতে যে ক’জন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন সাহিদা বেগম তাদের প্রথম কাতারে। পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে তিনি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন। পেঁয়াজের বীজ তাকে করেছে স্বাবলম্বী উদ্যোক্তা। সাহিদা বেগম এখন কোটিপতি।

সাহিদা বেগমের স্বামীর নাম বক্তার হোসেন খান। ১৯৮৭ সালে বিয়ে হয় এই দম্পতির। বক্তার হোসেন একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মেরিনা আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন এবং তিনি বিবাহিত। ছোট মেয়ে মার্জিয়া আক্তার নবম শ্রেণির ছাত্রী।

বিয়ের পর সাহিদা বেগম শ্বশুরবাড়ি এসেই গৃহস্থালির কাজে হাতেখড়ি হয় শাশুড়ির কাছে। ধানমাড়াই, ঢেঁকিতে ধানভাঙা, গৃহস্থালির কাজ সবই করতেন তিনি। শাশুড়ি জোহরা বেগমের গৃহস্থালির কাজ দেখে দেখে সব কাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। ধান, পাট, গম, ছোলা, প্রভৃতি শস্যই চাষাবাদ করত পরিবারটি। ২০০৪ সালের দিকে বাড়ির পাশের এক চাষিকে পেঁয়াজ বীজ চাষ করতে দেখে আগ্রহী হন সাহিদা বেগম। সেই থেকে শুরু। প্রথম বছর ২০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেন। সেবার দুই মণ পেঁয়াজ বীজ পান সাহিদা বেগম। তা বিক্রি করে পান ৮০ হাজার টাকা। তারপর থেকে তিনি পেঁয়াজ বীজের চাষ বাড়াতে থাকেন এবং সফলতা পান। সর্বশেষ চলতি বছরে ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেন। এবার ২০০ মণ পেঁয়াজের বীজ পেয়েছেন। যার প্রতি মণের দাম দুই লাখ টাকা। যার মূল্য কমপক্ষে চার কোটি টাকা।

স্বামী বক্তার হোসেন খান অফিসের কাজ শেষে সময় পেলে সাহিদা বেগমকে সহযোগিতা করেন। বাকি সবকিছু সাহিদাকেই সামলাতে হয়। সাহিদা বেগমের দিন শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। ঘুম থেকে ওঠেন। পরিবারের সদস্যসহ কৃষিশ্রমিকদের জন্য নিজ হাতে রান্না করেন। সকালের খাবার খেয়ে চলে যান মাঠে। মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরতে বিকাল গড়ায়। বাড়ির গৃহস্থালির কাজসহ কৃষিকাজ সবই নিজ হাতে সামলান তিনি। সাহিদার জমিতে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন ছয় মাস। এ ছাড়া সারা বছরই অন্তত ২০ জন শ্রমিক থাকেন।

‘খান বীজ’ নামে নিজের উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজ মোড়কজাত করে বিক্রি করেন সাহিদা বেগম। তার খান বীজ ফরিদপুর জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা কিনতে আসেন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, রংপুর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, পাবনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জ জেলায় চাহিদা বেশি। দেশজুড়ে ছড়িয়েছে খান বীজের সুনাম।

পেঁয়াজের বীজ চাষে সাহিদা বেগমের সাফল্য দেখে এ কাজে আগ্রহী হয়েছেন অনেকেই। স্নাতকোত্তর শেষে চাকরি খুঁজছিলেন আবির হোসেন নামে এক যুবক। পরে সাহিদা বেগমের পেঁয়াজ বীজ চাষ দেখে নিজে আগ্রহী হয়ে শুরু করেন পেঁয়াজ বীজ চাষ। তিনি এখন স্বাবলম্বী। এ বছর ২০ মণ পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এরকম অনেকেই সাহিদা বেগমের পেঁয়াজ বীজ চাষ দেখে নিজেরা চাষ করে দেখেছেন সফলতার মুখ।

সাহিদার স্বামী বক্তার হোসেনের বলেন, আমার স্ত্রী প্রচণ্ড ধৈর্য নিয়ে, শ্রম দিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেন। এবারও চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। সুফলও তিনি পেয়েছেন। এবার প্রায় একশ একর জমিতে চাষ করেছেন। তিনি দেড় যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করছেন। দুই বিঘা জমি দিয়ে শুরু করে এখন তা বাড়িয়ে একশ একর জমিতে চাষ করছেন। সাহিদা বেগম পেঁয়াজের বীজ চাষ করে পেয়েছেন দেশসেরা কৃষাণীসহ নানা পুরস্কার।

সাহিদা বেগম বলেন, পেঁয়াজের বীজ চাষ করা সহজ নয়। এটি অন্যান্য ফসলের চেয়ে খুব কষ্টসাধ্য কাজ। শিশুদের মতো লালন-পালন ও যত্ন করতে হয়। একজন নারী হয়েও অনেক কষ্ট করে কৃষিকাজে সফলতা পেয়েছি। অনেকের কটু কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু তাতে দমে যাইনি। আবহাওয়ার ওপর এ চাষ অনেকটা নির্ভরশীল। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো পেঁয়াজের বীজ পাওয়া যায়।

ফরিদপুর বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক (বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র) এস এম ইকরামুল হক বলেন, সাহিদা বেগম ফরিদপুরের মধ্যে নয়, দেশের মধ্যে ভালো পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। দেশসেরা কৃষক।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এবার প্রায় দশ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো। একটা সময় এই বীজের পুরোটাই আমদানি নির্ভর থাকলেও প্রতিনিয়ত দেশে কালো সোনা খ্যাত এই পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা এমআই সিক্সের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান হচ্ছেন ব্লেইজ মেট্রেওয়েলি এমআই সিক্সের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান হচ্ছেন ব্লেইজ মেট্রেওয়েলি ঈদযাত্রার ১৫ দিনে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০ জন ঈদযাত্রার ১৫ দিনে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯০ জন করোনা পরীক্ষায় পুরোপুরি প্রস্তুত নয় সরকারি হাসপাতালগুলো করোনা পরীক্ষায় পুরোপুরি প্রস্তুত নয় সরকারি হাসপাতালগুলো