weather ২৮.৯৯ o সে. আদ্রতা ৮৯% , সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ : ১২-০৬-২০২৫ ১১:০৭

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। অথচ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে সুদসহ আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; যা শতাংশ হিসেবে দুইয়ের কিছু বেশি।

এই প্রবৃদ্ধির চিত্র আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আমানত বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে আমানত বৃদ্ধির হার গ্রামীণ এলাকায় তুলনামূলক বেশি ছিল। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় গ্রামীণ অঞ্চলে তিন শতাংশের বেশি আমানত বেড়েছে, যেখানে শহরাঞ্চলে এই হার ছিল এক দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে মোট আমানতের নিরিখে শহরাঞ্চল এখনো অনেক এগিয়ে। 

মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার মধ্যে শহরাঞ্চলে জমা ছিল ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, আর গ্রামীণ এলাকায় ছিল তিন লাখ এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট আমানতের ৮৪ শতাংশেরও বেশি রয়েছে শহরে এবং গ্রামে রয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশের মতো।

এ ছাড়া আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে এর ওপর প্রদত্ত সুদের হারও। ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে গড় সুদহার ছিল ছয় দশমিক শূন্য চার শতাংশ; যা ২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে বেড়ে সোয়া ছয় শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এই সুদহার বৃদ্ধিই আমানত বাড়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। 

তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতে নানা অনিয়ম ও বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বেশ কয়েকটি ব্যাংক আর্থিক সংকটে পড়ে এবং সময়মতো আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এতে গ্রাহকের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয় এবং অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। একই সময়ে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে বেশি পরিমাণ অর্থ ধার করতে থাকে, যার ফলে সুদের হারও বেড়ে যায় এবং আমানত প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়ের বদলে জীবনযাপনের খরচ মেটাতে বাধ্য হন, যা সঞ্চয় প্রবণতা কমিয়ে দেয়।

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক ডজনেরও বেশি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এসব ব্যাংকের অনেকগুলো আগে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর এসব ব্যাংক আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং সুদহার বাড়িয়ে নতুন নতুন আমানত সংগ্রহ শুরু করে। এর পাশাপাশি দেশের আর্থিক খাত নিয়ে মানুষের আস্থাও কিছুটা ফিরে আসে, যা আমানত প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, আমানতের এই প্রবৃদ্ধি ব্যাংক খাতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি বলেন, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। গত ছয় মাসে রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং বিদেশ থেকে আসা অর্থের বড় একটি অংশই ব্যাংকে আমানত হিসেবে জমা হচ্ছে।

এছাড়া ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থা ফিরতে থাকায় গ্রাহকদের হাতে থাকা অর্থের একটি অংশও ব্যাংকে ফিরে এসেছে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর কিছু ব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমানত সংগ্রহে উদ্যোগ নিয়েছে; যার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে, তিন মাসের ব্যবধানে যখন আমানত প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে, তখন ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা; যা ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। 

ফলে তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা; যা প্রায় এক দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে ঋণের একটি বড় অংশই শহরাঞ্চলে দেওয়া হয়েছে- মোট ঋণের প্রায় ৯২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্রামীণ অঞ্চলে দেওয়া হয়েছে মাত্র এক লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের আট শতাংশ।

এই পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুদের হার বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার— এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবেই দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গতি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করল ইরান ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও তা করব: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও তা করব: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসি রেফারি; যারা খেলবে খেলুক, জিতবে জিতুক: সিইসি নাসির উদ্দীন ইসি রেফারি; যারা খেলবে খেলুক, জিতবে জিতুক: সিইসি নাসির উদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা দম্পতিকে গুলি করে হত্যা যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা দম্পতিকে গুলি করে হত্যা ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত সহজে থামাতে পারি: ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত সহজে থামাতে পারি: ট্রাম্প