বাজারে ভরপুর শীতের সবজি, দামও কম
প্রকাশ : ০৩-০১-২০২৫ ১৩:০৮

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর বাজার। দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমেছে সবজির দাম। তবে ডিম, মাছ ও মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সহনীয় মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শীতের সবজি। গত সপ্তাহের ৪০ টাকা কেজি মুলা আজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, ৬০ টাকার গোল বেগুন ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৩০ টাকা থেকে ৪০, ৪০ টাকার কলার হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শালগম ৪০ টাকায়, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ও টমেটো ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া করলা, পটোল, ঝিঙা ও ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, লালশাক, পালং ও কলমি শাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আলু ও পেয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের ৫৫-৬০ টাকার আলু প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি রসুন ২৫০ টাকা ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। তবে কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেল ঠিকভাবে সরবরাহ করছে না; রমজানের আগে আরেক দফা তেলের দাম বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ খুচরা দোকানিদের। বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন ৮৫০ এবং এক লিটার ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিপিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। প্রতি ডজন ডিম ১৩০- ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর মাংসের কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০০- ৭৫০ টাকায়। অপরিবর্তিত দেখা গেছে মাছের বাজার।
বাজারে ছোট রুই প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মালিবাগ বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাব্বির আহমেদ। এ ক্রেতা বলেন, কিছুদিন আগেও সবজির দাম ছিল আকাশছোঁয়া, সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কমেছে। তবে এখনো কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি রয়ে গেছে, যদিও বিক্রেতারা বলছেন— এখন এই সবজিগুলোর মৌসুম নয়। বাকি সবজিগুলোর দাম তুলনামূলক কম।
তিনি আরো বলেন, এখন সবজি কিনে খুব স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিগত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কমেছে ঠিকই, তবে দু-এক বছর আগে শীতের সময় সবজির দাম আরো কম থাকতো। তারপরেও কিছুদিন আগের চেয়ে সবজির দাম তুলনামূলক অনেকটাই কমে এসেছে।
মহাখালীর সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, আগের তুলনায় সবজির দাম এখন অনেক কম। যে কারণে সবজি বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। আগে এক আইটেমের সবজি যদি পাঁচ কেজি বিক্রি হতো, এখন সেটি আট থেকে ১০ কেজি বিক্রি হয়। দাম কম থাকলে ক্রেতারা কিনে স্বস্তি পান। বিক্রির পরিমাণ বাড়ায় আমরাও লাভবান হই।
তিনি আরো বলেন, পুরো শীতেই সবজির দাম এমন কমই থাকবে। শীত কমার পর সবজির দাম আবার কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এখন যে সবজির দাম চলছে, এমন কম দাম অনেকদিন দেখা যায়নি।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, এখনো সবজির দাম খুব কম, সামনে হয়তো আরো কমতে পারে। রাজধানীর অন্যান্য খুচরা বাজারগুলোর তুলনায় কারওয়ান বাজারের সবজির দাম কম। কিন্তু যারা খুচরা ব্যবসায়ী তারা এখান থেকে কিনে, পরে পরিবহন, লেবার খরচ, দোকান খরচ সবকিছু ধরে সবজির দাম নির্ধারণ করে। ফলে কারওয়ান বাজারের তুলনায় অন্যান্য সব খুচরা বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। তবে সব দিক থেকে হিসাব করলে গত বছরের পুরো সময়ের চেয়ে নতুন বছরের শুরুতে এই সময় এসে বাজারের সবচেয়ে কম দাম যাচ্ছে সবজিগুলোর।
জিনজিরা কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, কোম্পানিগুলো প্রতিদিন বোতলজাত তেলের সরবরাহ করছে না। কয়েকদিন পরপর ডিলাররা দোকানে এলে দুই-এক কার্টন করে সরবরাহ করছে। তবে দিনে আমাদের চাহিদা ১০-১২ কার্টন। যে পরিমাণে তেল চাচ্ছি, সে পরিমাণে তেল পাচ্ছি না।
তিনি জানান, কোম্পানিগুলো সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়িয়ে নিলেও বাজারে সরবরাহ বাড়ায়নি। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়াতে এমন সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি শুরুর থেকে রাইস ব্রান তেলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানেও বাজারের মুদি দোকানে রাইস ব্রান তেল নেই।
নয়াবাজারের মুদি ব্যবসায়ী তুহিন বলেন, কোম্পানিগুলোর কাছে তেল যে নেই, তা বলা যাবে না। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে। তারা রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়াবে। ডিলারদেরও একই কথা বলে দেওয়া হয়েছে। তাই ডিলাররা দোকানে আসছে না। যেদিন আসছে, সেদিনই তেল পাচ্ছি। তবে চাহিদা ১৫ কার্টন দিলে পাচ্ছি দুই থেকে তিন কার্টন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাই সরকারকে চাপে ফেলে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে এখন যে তেল তারা মিল থেকে সরবরাহ করছে, তা আগের কম দামে কেনা।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com