যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় মানুষের ক্ষুধা দূর হচ্ছে না: ডব্লিউএইচও
প্রকাশ : ২৪-১০-২০২৫ ১২:০২
ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও গাজায় ক্ষুধার সংকট বিপর্যয়কর পর্যায়ে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ সতর্কবার্তা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস গাজার মানুষের ক্ষুধা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এ সতর্কবার্তা দেন।
এদিকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়া বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, অবরুদ্ধ গাজায় যে পরিমাণ খাদ্যসরবরাহ করা হচ্ছে, তা সেখানকার মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, গাজায় প্রতিদিন দুই হাজার টন ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক কম পৌঁছাচ্ছে। এর কারণ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে বর্তমানে মাত্র দুটি প্রবেশদ্বার খোলা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রেয়াসুস বলেন, পরিস্থিতি এখনো বিপর্যয়কর পর্যায়ে আছে। কারণ, যা প্রবেশ করছে, তা একেবারেই যথেষ্ট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকার কারণে ক্ষুধাজনিত সংকটে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
গত বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রচণ্ড রকমের অনাহারে ভুগছেন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫০০ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীও আছেন। জাতিসংঘ বলেছে, অপুষ্টিজনিত এ সংকট গাজায় ‘পুরো এক প্রজন্মের ওপর’ ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপনির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন গত বুধবার বলেন, গাজায় এখন নবজাতকদের ৭০ শতাংশই অপরিণত অবস্থায় বা কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগে এ হার ছিল ২০ শতাংশ।
স্যাবারটন আরো বলেন, অপুষ্টির প্রভাব শুধু মায়ের ওপর নয়, নবজাতকের ওপরও পড়ে। এ কারণে শিশুটি সারা জীবন দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যায় ভুগতে পারে এবং তার জন্য দীর্ঘসময় ধরে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।
গত আগস্টে গাজা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) বলেছে, গাজা অঞ্চলের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ বিপর্যয়কর অবস্থার মুখোমুখি।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে উপত্যকাটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পরিমাণ বাড়ানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টন সহায়তা প্রবেশ করানোর কথা জাতিসংঘের। তবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি গত মঙ্গলবার বলেছে, প্রতিদিন গাজায় মাত্র প্রায় ৭৫০ মেট্রিক টন খাবার পৌঁছাচ্ছে। কারণ, গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন মাত্র দুটি ক্রসিং চালু আছে। এগুলো হলো, দক্ষিণে কারেম আবু সালেম ও মধ্যাঞ্চলে আল-কারারা ক্রসিং।
ফিলিস্তিনি এনজিও পিএআরসির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক বাহা জাকুত বলেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পরও গাজা অঞ্চলের পরিস্থিতি বিপর্যয়কর অবস্থায় আছে।
জাকুত উদাহরণ দিয়ে বলেন যে বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকলেট ও সোডা ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বীজ ও জলপাইয়ের মতো পণ্যগুলো এখনো সীমিত পরিমাণে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। যেসব পণ্য প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে সেসব শিশু, নারী ও সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পুষ্টিমান পূরণ করে না।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, কিছু ফলমূল ও সবজি গাজায় প্রবেশ করলেও সেগুলোর দাম অত্যন্ত বেশি। এক কেজি টমেটো আগে যেখানে এক শেকেলে পাওয়া যেত, তা এখন প্রায় ১৫ শেকেলে বিক্রি হচ্ছে।
এরই মধ্যে অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি ত্রাণ সংস্থা বৃহস্পতিবার একটি খোলাচিঠি প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল অবৈধভাবে গাজায় ত্রাণসামগ্রী প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। ইসরায়েল সরকার নিয়মিতভাবে তাদের (সংস্থাগুলোর) মানবিক কার্যক্রম শুরুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, গাজায় ত্রাণ বিতরণে ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নাকচ করা হয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর ছয়টি আবেদনও।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণা করা ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আছে— তাঁবু ও ত্রিপল, কম্বল, গদি, খাদ্য ও পুষ্টিসামগ্রী, স্বাস্থ্য কিট, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের সামগ্রী, সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং শিশুদের পোশাক। যুদ্ধবিরতির সময় এসব সামগ্রীর ওপর থেকে সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়া দরকার বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com