অর্গানিক বারিয়াল পড: মৃত্যুর পর সবুজ বৃক্ষ হবে মানুষ!
প্রকাশ : ২৫-১০-২০২৫ ১০:৪১
ছবি : সংগৃহীত
পিপলসনিউজ ডেস্ক
ধর্ম বা বিজ্ঞানের কতটুকু জানি আমরা? স্বাভাবিক জ্ঞানে আমরা জানি মৃত্যুর পর কেউ ইহজগতে ফিরে আসবে না। কেউ বিশ্বাস করেন আত্মা অমর, কেউ বা মনে করেন মৃত্যু মানেই চূড়ান্ত সমাপ্তি।
ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক কখনোই সহজ নয়। মানুষ যুগে যুগে মৃত্যুর অর্থ খুঁজে ফিরেছে— এটি কি শেষ, নাকি আরেকটি রূপান্তর?
নতুন তথ্য, মৃত্যুর পর মানুষ গাছ হয়ে ফিরে আসবে। বিজ্ঞান এখন সেটিকেই বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে।
প্রাচীন থেকে আধুনিকের সংযোগ: এই ধারণার শিকড় কিন্তু নতুন নয়। বহু আগে থেকেই পৃথিবীর আদি জনগোষ্ঠীরা বিশ্বাস করত— মৃত্যু কোনো চূড়ান্ত বিদায় নয়; এটি কেবল জীবনের এক রূপান্তর। ইন্দোনেশিয়ার সুলাওসি দ্বীপের টোরাজা (Toraja) জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত এক অন্ত্যেষ্টি প্রথা যা এই আধুনিক ধারণার সূত্র ধরিয়ে দেয়। টোরাজারা বিশ্বাস করে, মৃত্যুর পর আত্মা প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, আর জীবনের ধারা অব্যাহত থাকে গাছ, মাটি ও বাতাসের মধ্যে।
তাদের সমাজে যখন কোনো শিশু দাঁত ওঠার আগেই মারা যায়, তখন তাকে কফিনে রাখা হয় না। বরং জীবিত একটি গাছের গুঁড়ির ফাঁকা অংশে শিশুটির দেহ কাপড়ে জড়িয়ে স্থাপন করা হয়। তারপর সেই ফাঁকটি তালপাতার আঁশ বা তন্তু দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে গাছটি ধীরে ধীরে শিশুটির শরীরকে শোষণ করে নেয়— যেন প্রকৃতি তার সন্তানকে নিজের মধ্যে ধারণ করে নেয়। গাছের গায়ে থেকে যায় একটুখানি দাগ, যা পরবর্তীতে মিলিয়ে যায় সময়ের প্রবাহে। এই প্রক্রিয়াটি টোরাজাদের কাছে পুনর্জন্মের প্রতীক— যেখানে মৃত্যু মানে প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়া, অন্য রূপে আবার বেঁচে থাকা।
একই ধরনের প্রথা দেখা যায় ফিলিপাইনের কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যেও। তারা এই প্রথাকে বলে ‘ট্রি বুরিয়াল’। তাদের বিশ্বাস, মানুষ প্রকৃতির সন্তান, তাই মৃত্যুর পর তাকে মাটিতে সমাধি না দিয়ে গাছের ভেতর আশ্রয় দেওয়া উচিত, যাতে আত্মা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে মুক্তি পায়। কোনো বিশেষ গাছ বেছে নিয়ে তার কাণ্ডে ফাঁকা জায়গা তৈরি করা হয়, তারপর সেখানে দেহ স্থাপন করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাছটি সেই দেহকে নিজের অংশে পরিণত করে— জীবন ও মৃত্যুর এক মায়াবী চক্র সম্পূর্ণ হয় এইভাবে।
এইসব প্রাচীন প্রথা যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতি কেবল জন্ম ও জীবনের নয়, মৃত্যুরও চিরন্তন আশ্রয়। আজ যখন আধুনিক সভ্যতা পরিবেশ ধ্বংসের মুখে, তখন সেই প্রাচীন জ্ঞানই নতুনভাবে ফিরে আসছে বিজ্ঞানের ভাষায়।
মৃত্যুর পরও জীবনের বিস্তার: বিশ্বজুড়ে এখন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এক পরিবেশবান্ধব অন্ত্যেষ্টি পদ্ধতি— ‘অর্গানিক বারিয়াল পড’। এটি মূলত একটি জীবাণুবিযোগ্য ক্যাপসুল, যেখানে রাখা হয় মৃতদেহকে। এরপর সেই ক্যাপসুলের ওপরে রোপণ করা হয় একটি গাছের বীজ বা চারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেহটি প্রকৃতির নিয়মে ভেঙে মাটিতে মিশে যায়, আর সেই দেহই হয়ে ওঠে গাছের পুষ্টি। গাছটি বেড়ে ওঠে, ফুলে ফলে, আর মানুষ যেন নতুন জীবনের রূপে ফিরে আসে প্রকৃতিতে।
এই প্রক্রিয়াটি একাধারে বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক। এটি মৃত্যুকে কোনো সমাপ্তি নয়, বরং নতুন জীবনের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করে। এক জীবনের শেষে আরেক জীবনের শুরু— এই চক্রই প্রকৃতির শাশ্বত সত্য।
অর্গানিক বারিয়াল পডের অন্যতম লক্ষ্য হলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা। প্রচলিত কবর বা দাহপ্রথায় যেমন কাঠ, ধাতু, রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয়, তাতে প্রকৃতির ক্ষতি হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে কোনো বর্জ্য তৈরি হয় না, বরং মৃতদেহ নিজেই প্রকৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে। ইতালির ডিজাইন স্টুডিও ক্যাপসুলা মুন্ডি প্রথম এই ধারণাকে বাস্তবে নিয়ে আসে। তারা বলে, ‘আমরা চাই মৃত্যু যেন প্রকৃতির অংশ হয়, আলাদা নয়।’
প্রতিটি বৃক্ষই যেন হয়ে ওঠে এক জীবন্ত স্মৃতিস্তম্ভ, একজন প্রিয় মানুষকে মনে রাখার নতুন উপায়। পাথরের নিচে নিস্তব্ধ হয়ে থাকা নয়, বরং পাতা, ফুল আর বাতাসে মিশে থাকা চিরন্তন উপস্থিতি।
একটি অর্গানিক বারিয়াল পড বস্তুত বলে দেয়, প্রকৃতির সন্তান মানুষ ফিরে আসবে প্রকৃতির অংশ হয়ে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com