রুদ্ধশ্বাস জয়ে আফগানদের বিপক্ষে একম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ বাংলাদেশের
প্রকাশ : ০৪-১০-২০২৫ ১২:২৯

ছবি : সংগৃহীত
ক্রীড়া ডেস্ক
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে আরো একটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের জন্ম দিয়ে আফগানিস্তানকে ২ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর শেষ মুহূর্তের স্নায়ুর চাপের লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করল জাকের আলীর দল।
বোলিংয়ের শুরুতে ছিল উইকেট না নিতে পারার চাপ, ব্যাটিংয়ের শুরুতে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার। তবে শেষটা ভালো হয়েছে দুই বিভাগেই। আর ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’ প্রমাণ করে দিন শেষে জয়ের হাসিটা বাংলাদেশেরই।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) আফগানিস্তানের করা ৫ উইকেটে ১৪৭ রান বাংলাদেশ টপকে গেছে ২ উইকেট আর ৫ বল হাতে রেখেই। আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হওয়া সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি–টোয়েন্টি রবিবার।
বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়েছে ২০তম ওভারের প্রথম বলে শরীফুল ইসলামের চারে। আরেক প্রান্তে ৩১ রানে টিকে থেকে টানা দ্বিতীয় জয়ে অপরাজিত নুরুল হাসান। অথচ ১৮ ওভার শেষে বাংলাদেশ দল ছিল চাপের মধ্যে। হাতে মাত্র ২ উইকেট, শেষ ১২ বলে দরকার ১৯ রান।
ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নূর আহমেদের করা ১৯তম ওভার থেকে নুরুল ও শরীফুল নিয়েছেন ১৭ রান। যেখানে নুরুলের অবদান ২ বলে ৭, শরীফুলের ৪ বলে ৭, বাকি ৩ অতিরিক্ত খাতের।
এর আগে বাংলাদেশকে জয়ের ভিত গড়ে দেয় জাকের আলী–শামীম হোসেনের চতুর্থ উইকেট জুটি। তানজিদ হাসান-পারভেজ হোসেনের উদ্বোধনী জুটি আগের ম্যাচে ১০৯ রান তুললেও এবার দুজনই আউট ১৬ রানের মধ্যে। ২ ছক্কায় ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের ইঙ্গিত দেওয়া সাইফ হাসানও ফেরেন দলকে ২৪ রানে রেখে। এরপর জাকের–শামীমের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটিই দলকে জয়ের পথে ধরে রাখে।
৩৭ বলে ৫৬ রানের জুটি ভাঙে রশিদ খানের বলে জাকের আলীর এলবিডব্লুতে। টানা ৪ ইনিংসে এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়ে যাওয়া জাকের এ ম্যাচে ২৫ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় করেন ৩৩ রান। আরো একটি খরাও কেটেছে তার— আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭ ইনিংস আর ৮৬ বল পর ছক্কা মেরেছেন তিনি।
শামীমও তার ইনিংস খুব একটা বড় করতে পারেননি এরপর। ২২ বলে ৩৩ রান করে তিনি ক্যাচ দেন নূরের বলে। তাদের দুজনের বিদায়ের পর নাটকীয়ভাবেই বদলে যায় ম্যাচের মোড়। বাংলাদেশ চাপে পড়ে আবারো। ১০২ থেকে ১২৯— এই ২৭ রানের ব্যবধানে তারা হারায় ৪ উইকেট।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও রিশাদ হোসেন দুজন ফেরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ওভারে ২ বলের ব্যবধানে। নতুন করে জমে ওঠা নাটকের ওই পর্যায়ে হাল ধরেন নুরুল। ২১ বলের ইনিংসে ৩ ছক্কা আর ১টি চার তার।
শেষ দিকে নুরুলকে সঙ্গ দেওয়া শরীফুল বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত। নিজের প্রথম ৩ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান। যদিও পাওয়ারপ্লেতে আফগানিস্তানের কোনো উইকেটই নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
ভালো দিক ছিল ৬ ওভারে ৩৫ রানে আটকে ছিলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার। পরে সেখান থেকে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা করেন রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদ। দুজনেই ২টি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে দেন মাত্র ২২ রান।
ডেথ ওভারে শরীফুলের দুর্দান্ত ইয়র্কারে রহমানউল্লাহ গুরবাজ বোল্ড হলে আফগানিস্তানের দেড়শ ছাড়ানোর সম্ভাবনা মিইয়ে যায়। গুরবাজ আউট হওয়ার আগে করেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ বলে ৩০ রান। ওপেনিংয়ে নামা ইব্রাহিম জাদরান করেন ৩৭ বলে ৩৮। যা যথেষ্ট হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখার জন্য।
বল হাতে ৪ ওভারে ১৩ রানে ১ উইকেট আর ব্যাট হাতে ৭ বলে ১১ রানের অপরাজিত ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন শরীফুল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের টানা তৃতীয় জয়। চলমান সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের আগে গত মাসে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বেও জিতেছিল বাংলাদেশ। এখন দুই দলের ১৫ ম্যাচের মুখোমুখি লড়াইয়ের স্কোরলাইন বাংলাদেশ ৮, আফগানিস্তান ৭।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৭/৫ (জাদরান ৩৮, গুরবাজ ৩০, আতাল ২৩, নবী ২০*, ওমরজাই ১৯*; নাসুম ২/২৫, রিশাদ ২/৪৫, শরীফুল ১/১৩)। বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ১৫০/৮ (শামীম ৩৩, জাকের ৩২, নুরুল ৩১*, সাইফ ১৮; ওমরজাই ৪/২৩, রশিদ ২/২৯)। ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শরীফুল ইসলাম। সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২–০ ব্যবধানে এগিয়ে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com