সবজিতে স্বস্তি, চাল-মুরগির দামে অস্বস্তি
প্রকাশ : ২৪-০১-২০২৫ ১২:৪১

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাজারে নতুন করে পণ্যের দামে খুব একটা হেরফের হয়নি। তবে মাসখানেক ধরে বাড়তি চালের দাম কমছে না। পাশাপাশি মুরগির দামও কিছুটা বাড়তি রয়ে গেছে। এ ছাড়া বাজার ভরপুর শীতের সবজিতে। বছরের অন্যান্য সময় দাম চড়া থাকলেও এখন বেশ কম যাচ্ছে সবজির দর। ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। এতে খুশি ক্রেতারা। দাম কমায় বিক্রিও বেড়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনি চিত্র দেখা গেছে।
চালের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। আমনের ভরা মৌসুমের পাশাপাশি শুল্ক কমানো ও আমদানিসহ কয়েকটি উদ্যোগ নিলেও কোনো কাজে আসছে না। এক মাস ধরে মানভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের কেজিতে দুই থেকে ছয় টাকা বেড়েছে।
এখন খুচরায় প্রতিকেজি সরু বা মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮২ টাকায় আর নাজিরশাইল মানভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে মিনিকেট ৭২ থেকে ৮০ এবং নাজিরশাইলের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল।
মাঝারি বা ব্রি-২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। এ ছাড়া মোটা বা গুটি স্বর্ণা জাতের চালের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা। মোটাদাগে বাজারে এই দামের নিচে কোনো চাল নেই। যদিও একমাস আগে মোটা চালের কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে চালের মতো কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির বাজার বাড়তি। প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এরচেয়ে বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। এ জাতের মুরগির কেজি কিনতে হলে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা; যা আগে ৩০০-৩২০ টাকা ছিল।
তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কম রয়েছে। বড় বাজারে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। পাড়া মহল্লার দোকানে তা ১৪০-১৪৫ টাকা।
অন্যদিকে বাজারে শীতের সবজি এখনো কম দামে মিলছে। আলুর দাম ২০-২৫ টাকার মধ্যে এসেছে। পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে।
এ ছাড়া প্রতিকেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শিম ৩০ থেকে ৫০, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করল্লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকায় কেনা যাচ্ছে।
প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপি মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং লাউয়ের পিস কেনা যাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
এদিকে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল; তা ছিল আকারে একটু বড়। প্রায় ১০ দিন ধরে এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে মুদি বাজারে দামের তেমন হেরফের দেখা যায়নি। প্রতিকেজি আমদানি করা মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ ও দেশি চিকন মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ থেকে টাকা, মুগডাল ১৬৫ থেকে ১৭০ ও ছোলার কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে সয়াবিন তেল নিয়ে এখনো ভুগছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এক মাস পরও স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেলের বাজার। দাম বাড়ানোর এক মাসের মাথায়ও বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করেনি কোম্পানিগুলো। এখনো পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল। গত ৯ ডিসেম্বর সরকার তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রতি লিটার খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ে আট টাকা করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা অর্ডার এবং অগ্রিম টাকা দিয়েও সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল দেয় না কোম্পানিগুলো। গ্রাহক পর্যায় থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, ১০ দোকান ঘুরলে এক দোকানে তেল পাই। কেউ কেউ দাম রাখে বেশি। আবার কেউ অন্যান্য পণ্য না কিনলে তেল বিক্রি করছে না।
শান্তিনগর বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী সারোয়ার আলম রাসেল বলেন, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন সবজি কিনে খুব স্বাচ্ছন্দ্য হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের থেকে এখন বাজারে সবজির দাম কম। মাঝখানে যখন সবজির দাম বেড়ে গিয়েছিল, তখন তো আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে সবজি কিনতাম। তবে গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজি কিনে আমরা খুশি, দাম কম হওয়ায় পরিমাণেও বেশি কিনছি। মোটামুটি বলা যায় ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে সব ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে।
মগবাজারে সুজাউদ্দিন বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে সস্তা পণ্যগুলোর মধ্যে সবজি রয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা এখন সবজি কিনতে পারছে। কম দামে সবজি কেনা গেলেও অন্যান্য সব কিছুর দাম বেশি। সবজি দামের মতো অন্যান্য জিনিসের দাম কমলে, ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে পারতো।
মালিবাগ এলাকার সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে কম দাম চলছে সবজির। এক দেড় মাস আগেও সবজির দাম বেশি ছিল, তার আগে আরো চড়া ছিল সবজির বাজার। তখন সাধারণ ক্রেতারা খুব অল্প পরিমাণের সবজি কিনতো। সেই তুলনায় এখন সবজি দাম অনেক কম। আগে যে ক্রেতা আধা কেজি সবজি কিনতো, সেই ক্রেতাই এখন এক থেকে দুই কেজি করে কেনেন। কারণ দাম কম। ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে সব সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে দুই একটি সবজির মৌসুম এখন না হওয়ায় সেগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে থাকায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে। আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকলে দাম খুব বেশি বাড়ত না।
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. শামসুল ইসলাম বলেন, প্রতি মাসে গড়ে ৩৫ কেজি মিনিকেট (রশিদ) চাল কিনি। এতে খরচ হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মাসে চাল কিনতে প্রায় ২৮০ টাকা বেশি লেগেছে। কারণ, বাজারে চালের দাম বেড়েছে।
শামসুল ইসলাম আরো বলেন, বেশি দামের কারণে এমনিতেই অন্যান্য বাজার করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থায় আছি। এখন চালের দামও বাড়ল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com