weather ২৫.৯৯ o সে. আদ্রতা ৬৯% , বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবজিতে স্বস্তি; মাছ, মাংস, তেল ও চালে অস্বস্তি

প্রকাশ : ১৭-০১-২০২৫ ১২:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক
কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি কম দামে পাচ্ছেন ক্রেতারা। কয়েক সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক কম দাম সবজির। এদিকে মাছ, মাংস, তেল ও চালের চড়া বাজার ভোগাচ্ছে ভোক্তাদের। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। নিত্যপণ্যের বাজারে তাই কোনো আশ্বাস নয়, স্বস্তির বার্তা চান তারা।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কম দামে কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। গত দুই সপ্তাহ বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ টাকা, টমেটো ৫০, পালংশাক, লাল শাক, পেঁয়াজের কলি প্রতি আঁটি ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে এসেছে।

এদিকে, মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বছরের শুরু ও শীত মৌসুমে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে মাছের। তবে সেই তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে।
তারা আরো জানান, শেষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বেড়েছে মাছের দাম। এখন কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেশি।

বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে; যা ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে ছিল। এ ছাড়া একইভাবে দাম বেড়ে পাবদা ৩৬০-৪০০, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, এক কেজি সাইজের রুই-কাতল ৩০০-৩২০, বড় রুই-কাতল ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া সামুদ্রিক কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি শিং এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার, শোল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আরো অস্থির হয়েছে ইলিশের বাজার। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ তিন হাজার ২০০ টাকা, এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।

এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়।

অস্থিরতা কমেনি চালের বাজারেও। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ায় এর প্রভাব খুচরা পর্যায়েও পড়ছে। দাম বাড়ায় কমেছে চালের বেচাকেনাও। বাড়তি দামের প্রভাবে মানুষ চাল কম কিনছেন।

একই অবস্থা তেলের বাজারেও। দাম বাড়ানোর এক মাস পরও বাজারে কৃত্রিম সংকট কাটেনি বোতলজাত সয়াবিন তেলের। ভোক্তাদের অভিযোগ, বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে। হাতে গোনা দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

তেলের বাজারের এই অস্থিরতার কথা স্বীকার করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে বাজারে সোনালি মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে ব্রয়লারের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকায়।
এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।
আর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
তবে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩৫-১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ানবাজারে সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ বাড়ায় কমছে সবজির দাম। কোনো কোনো সবজির দাম ওঠানামা করলেও সপ্তাহ ব্যবধানে বেশিরভাগেরই দাম অনেকটাই স্থিতিশীল। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

মহাখালী বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম বলেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে বাজারে এখন সবজির দাম তুলনামূলক কম। যে কারণে বেশি করে সবজি কিনতে পারছি আমরা। তবে দুই একটি সবজির দাম এখনও বাড়তি। যদিও বিক্রেতারা বলছেন এটির এখন মৌসুম না, সে কারণে দাম বেশি। বাকিগুলোর দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। সাধারণ ক্রেতারা এই সময় এসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। বছরের অন্যান্য সময়ও যদি সবজির দাম এমন সহনীয় পর্যায়ে থাকে তাহলে সাধারণ ক্রেতারা সবজি কিনে খুশি থাকবেন। 

মগবাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, বাজারে এখন সবজির দাম কম। বর্তমান সময় সবজির ভরপুর মৌসুম, যে কারণে বাজারে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ আছে সবজির। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এই সময়ে এসে সবজির দাম একদম কম যাচ্ছে। যে কারণে ক্রেতারাও তুলনামূলক বেশি পরিমাণে সবজি কিনছেন। আগে যেখানে সারা দিনে একজন বিক্রেতা এক মণ সবজি বিক্রি করতেন, এখন সেই বিক্রেতাই দুই মণ সবজি বিক্রি করছেন। তবে এমন কম দাম সব সময় থাকবে না, শীত কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সবজির সরবরাহ কমবে, দামও বাড়বে। 

মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বাজারে সবজির দাম অনেক কম কম যাচ্ছে। তবে দুই থেকে তিন প্রকারের সবজির মৌসুম এখন না থাকায় সেই সবজিগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে বাজারে। বাকি সব ধরনের সবজি বর্তমানে কম দাম। দাম বেশি সবজির মধ্যে রয়েছে  করলা, বরবটি, ঢেঁড়স, পটল। আসলে এসব সবজির মৌসুম এখন না, খুব অল্প পরিমাণের সরবরাহ রয়েছে এসব সবজির। যে কারণে অন্যান্য সব সবজি তুলনায় এগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি। 

রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম বাড়ছে। কারণ এখন খাল বিল শুকিয়ে আছে। সব এলাকায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
নিউমার্কেট বাজারের মাছ বিক্রেতা আতাউর বলেন, মাছের দাম দুমাস আগে থেকেই বাড়তি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়েছে। দেশি ও চাষের মাছের দাম প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে ওঠানামা করছে। বেশি দামে কিনলে বেশিতেই বিক্রি করতে হয়।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

‘দিবস দিয়া কী অইব?’ ‘দিবস দিয়া কী অইব?’ যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি সই যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি সই মহান মে দিবস আজ মহান মে দিবস আজ গরুর হাটের ইজারায় দুর্নীতির অভিযোগ, ঢাকা উত্তরে দুদকের অভিযান গরুর হাটের ইজারায় দুর্নীতির অভিযোগ, ঢাকা উত্তরে দুদকের অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুজনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুজনকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের