সবজির দাম কমেছে, চাল-মুরগি-মাছ চড়াই
প্রকাশ : ১০-০১-২০২৫ ১২:৪০

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে কমেছে সবজির দাম। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবজির সরবরাহও বেড়েছে। নতুন সবজিতে ভরে গেছে বাজার, ফলে কমেছে দামও। তবে ডিমের দাম স্থিতিশীল আর চাল, মুরগি ও মাছের দাম আগের মতোই চড়া।
আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ছুটির দিনে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম অনেকটাই কমে এসেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটোর দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে কমেছে। বাকি সবজিগুলো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি গোল ও লম্বা বেগুন আগের মতো ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি মুলা ২০ টাকা, পেঁপে ও শালগম ৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১৫-৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৪০-৫০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৬০-৮০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের মতো করলা, পটোল, ঝিঙা ও ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙা ৬০ টাকা, গাজর ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ৫০-৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। লালশাক, পালং, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে আলুর দাম। গত সপ্তাহে ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া আলু ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কেজি ৫০-৫৫ টাকা, ভারতীয় নতুন পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া দেশি রসুন ২৫০ ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চীনা আদা ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খোলা সয়াবিন তেল গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা পাম তেল ও সুপার প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা, বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা দরে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৭৫০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস প্রতিকেজি এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আকারভেদে প্রতিকেজি পাবদা মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, ছোট রুই ২৫০ টাকা, চার থেকে পাঁচ কেজি ওজনের রুই ৪৫০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, পাঙাশ আকারভেদে ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের মতোই চড়া চালের বাজার। প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৮০-৯০ টাকা, মানভেদে মিনিকেট ৮৫-৯০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৬০-৬৫ টাকায়, মোটা চাল (গুটিস্বর্ণা) ৫৫-৫৮ টাকা, পুরোনো আটাশ ৬৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৪-৯৮ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, শীতের সবজির প্রচুর সরবরাহ, দামও কম। বাজারে এখন প্রচুর আলু পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে দেশি আলু। এ জন্য দাম কমেছে।
ঝিগাতলা কাঁচাবাজারের নিয়মিত ক্রেতা আলতাব হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহে বাজারে শীতকালীন সবজির দাম অনেকটা কমেছে। এমন দাম থাকলে সবার জন্যই সুবিধা হয়।
মহাখালী বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী ফরিদ আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজারে অন্যান্য জিনিসের তুলনায় সবজি কিনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হচ্ছে। কারণ বর্তমানে সবজির দাম কম যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছিল, সেই তুলনায় এখন সবজির দাম কম। আমরা চাই সবজির এমন দামের মতো বাজারে অন্যান্য পণ্য সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসুক। তবে কয়েক বছর আগে শীতের সময় অর্থাৎ সবজির ফুল মৌসুমে সব ধরনের সবজির দাম আরো অনেক কম থাকতো, সে হিসাব করলে সবজির দাম আর আগের মতো নেই। তবে কিছুদিন আগে সবজির চড়া দামের তুলনায় বর্তমানে সবজির বাজার কম যাচ্ছে।
মগবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা জয়নাল হক বলেন, বাজারে একেবারে কমে গেছে সবজির দাম, ক্রেতারা ব্যাগ ভরে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে দু একটি সবজির বর্তমানে মৌসুম না হয়, সেগুলোর দাম একটু বেশি। বাকি সব সবজির দাম অনেক কমে গেছে বাজারে। এ ছাড়া বাজারে টাটকা সবজির সরবরাহও অনেক বেশি, যে কারণে দাম কম যাচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর পরিমাণে সবজি ঢাকায় আসছে প্রতিদিন। সব সবজি নতুন এবং টাটকা, আগের তুলনায় বাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজির সরবরাহ হচ্ছে। যে কারণে বাজারে সবজির দাম কমে গেছে। কমপক্ষে আরো দেড় মাস সবজির দাম এমন কম থাকবে। এরপর থেকে কিছুটা বাড়তে শুরু করবে। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে সবজির দাম বর্তমানে যা যাচ্ছে, এর চেয়েও আরো অনেক কম দাম কারওয়ানবাজারে। যেকোনো ক্রেতা অন্যান্য বাজারের চেয়ে কারওয়ানবাজার থেকে আরো অনেক কম দামে সবজি কিনতে পারবে।
মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী হামিদুল্লাহ বলেন, বাজারভেদে চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমবেশি হয়। এর কারণ সরবরাহ ও মজুত। কারও কাছে পুরোনো চাল থাকলে সে আগের দামে বিক্রি করতে পারে।
একই বাজারে জুবায়ের নামে একজন ক্রেতা বলেন, ৭০ টাকার নিচে ভালো কোনো চাল নেই। ভরা মৌসুমে চালের এতদাম হলে অন্যসময় কী হবে?
কারওয়ান বাজারের কৃষি মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী ওলিউল্লাহ বলেন, কারওয়ান বাজারে অন্য মার্কেটের তুলনায় চালের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা কমে পাওয়া যায়। কারণ এখানে সবসময় ক্রেতা পাওয়া যায়। আর আমরা যেহেতু পাইকারি দিই, সেক্ষেত্রে অন্য জায়গার তুলনায় পার্থক্য থাকবেই।
মালিবাগ বাজারে নুরুন নাহার নামে একজন ক্রেতা বলেন, এখন যে পরিস্থিতি আগামী রমজানে তো মনে হয় চালের দাম ১০০ টাকা ছাড়াবে। চালের বাজারে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেন, রমজান সামনে রেখে সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের হাতে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই, যার মাধ্যমে রাতারাতি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। চালের বাজার নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। বাজারে অন্য কোনো পণ্যে অসঙ্গতি নেই। চাল মজুতেও ঘাটতি নেই। এরপরেও চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমদানি শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নামানো হয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিল মাসে বোরো ধান উঠলে চালের বাজার স্বাভাবিক হবে।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com