weather ৩০.৯৯ o সে. আদ্রতা ৭৪% , শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুইস ব্যাংকে এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ

প্রকাশ : ২০-০৬-২০২৫ ০৮:৪৯

ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩ গুণ বেড়েছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি)— সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ; যা ২০২৩ সালে ছিল মাত্র এক কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ। অর্থাৎ এক বছরে জমার পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ কোটি ১৮ লাখ ফ্রাঁ। সুইস ফ্রাঁর বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ফ্রাঁ প্রায় ১৪৯ টাকা) এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আট হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, ২০২১ সালের পর ২০২৪ সালেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়েছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে এই জমার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই হঠাৎ বৃদ্ধির বিষয়ে নানা ব্যাখ্যা উঠে আসছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। পরবর্তীতে বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি দেশ ছেড়ে পালান। সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হতে শুরু করে। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, এই পরিস্থিতিতে অনেকে তাদের সম্পদ এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করে থাকতে পারেন। এর ফলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের হঠাৎ জমা অর্থের এই উল্লম্ফন ঘটেছে।

তবে অর্থ জমার এই পরিমাণ কাদের নামে এবং কীভাবে জমা হয়েছে, সেই বিষয়ে সুইস ব্যাংক থেকে সরাসরি কোনো নাম প্রকাশ করা হয় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের নামে জমা হওয়া অর্থের সামষ্টিক হিসাব দেয়। এটি সে দেশের দায় হিসেবে তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সুইজারল্যান্ড একসময় অবৈধ অর্থ পাচারের নিরাপদ গন্তব্য ছিল। কারণ, দেশটির ব্যাংকগুলো গোপনীয়তা বজায় রাখত এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক তথ্য বিনিময় চুক্তির আওতায় ছিল না। ফলে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সেখানে গচ্ছিত রাখার প্রবণতা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। বর্তমানে সুইস ব্যাংক আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় এসেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করছে। ফলে আগের মতো করে সুইস ব্যাংকগুলো এখন আর অর্থ পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় নয়।

এদিকে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণও সুইস ব্যাংকে বেড়েছে। ২০২৩ সালে ভারতীয়দের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি সুইস ফ্রাঁ; যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি ফ্রাঁ।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থ জমা রাখার পাশাপাশি বৈধ পথে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকও সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরাও স্থানীয় শাখার মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন। এসব অর্থের সম্মিলিত হিসাবই বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নামে উল্লেখ করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড এখন অর্থ পাচারকারীদের কাছে আগের মতো আকর্ষণীয় গন্তব্য নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে যেখানে সহজে ও নিরাপদে অর্থ পাচার করা যায়। ফলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের হঠাৎ জমা অর্থ বেড়ে যাওয়াটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের হিসাবে বিগত সরকারের সময়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ পাচার হতো। সেই তুলনায় সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের এই পরিমাণ খুব বেশি নয়।’

অন্যদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য আমি তিনটি দিক বিবেচনায় নিচ্ছি। প্রথমত, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক হিসাব প্রদানে পদ্ধতিগত কোনো পরিবর্তন করেছে কিনা। পূর্বে উপেক্ষিত কিছু হিসাব কি এবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে স্থানান্তর হয়ে এসব অর্থ কি সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে? তৃতীয়ত, সরকার বদলের পর অর্থ পাচার রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও সুইস ব্যাংকে হঠাৎ করে এত বিপুল পরিমাণ জমা অর্থ কীভাবে গেল— তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’ তিনি বলেন, ‘এটি অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে বলে কোনো নিশ্চয়তা দেয় না।’

বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ অনেক বাড়ার কারণ জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিসংখ্যান জানানো হয়। তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা নিয়ে জানানোর চেষ্টার কথা জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের দাপ্তরিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

সুইস ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নামে দায় এক বছরে এত বড় উল্লম্ফন কেন হলো, তা প্রশ্নের অবকাশ রাখে। তবে এই বাড়ার পেছনে অর্থ পাচারের অনুমান করা গেলেও কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন। 

জাহিদ হোসেনের মতে, ব্যাংকগুলোর নামে পাওনা এত বেশি উল্লম্ফনের সঙ্গে বাণিজ্যকে পুরোপুরি মেলানো যাবে কিনা, সেই প্রশ্ন সামনে আসবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমেও অর্থ পাচার এবং মানি লন্ডারিং হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। গণঅভুত্থানে আগস্টে সরকারের পতন হয়েছে। ধারণা করা যায়, ওই বছর অর্থ পাচার বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত পরিসংখ্যানগুলো যাচাই করে এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করা।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২৯ বছরের মধ্যে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে সবচেয়ে কম জমা অর্থ ছিল ২০২৩ সালে এবং সবচেয়ে বেশি জমা হয়েছিল ২০২১ সালে— ৮৭ কোটি ফ্রাঁ। 

পিপলসনিউজ/আরইউ

-- বিজ্ঞাপন --


CONTACT

ads@peoplenewsbd.com

পাকিস্তানে হামলার হুমকি দিলেন ইসরায়েলের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানে হামলার হুমকি দিলেন ইসরায়েলের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে: আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে: আয়াতুল্লাহ খামেনি সুইস ব্যাংকে এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ সুইস ব্যাংকে এক বছরে ৩৩ গুণ বেড়েছে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ঢাবি-নর্থ সাউথের অবনতি, বুয়েট পূর্বের অবস্থানে কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে ঢাবি-নর্থ সাউথের অবনতি, বুয়েট পূর্বের অবস্থানে