হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ বাতিল
প্রকাশ : ২৩-০৫-২০২৫ ১১:৩৮

ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছে। এ পদক্ষেপের ফলে দেশটির সবচেয়ে প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চলমান অচলাবস্থা আরো তীব্র হলো।
পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরও বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে গত এপ্রিলে ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাধারী কয়েকজনের তথ্য চেয়েছে, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, তা না দিলে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ হারাতে পারে। মাসখানেকের মধ্যে সেই পথেই হাঁটল দেশটির প্রশাসন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ লেখেন, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসন স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের অধীনে হার্ভার্ডের সার্টিফিকেশন বাতিল করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, তারা ১৪০টিরও বেশি দেশের বিদেশি ছাত্র এবং পণ্ডিতদের স্বাগত জানানোর ক্ষমতা সংরক্ষণে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, গত শিক্ষাবর্ষে ছয় হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল। এ বছরের শুরু থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপড়েন শুরু হয়।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা তহবিল ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘চরম বামপন্থী, মার্ক্সবাদী ও মার্কিন-বিরোধী’ চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, হার্ভার্ডের পাশাপাশি নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও কথিত ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে।
হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, তারা শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় জাতিগত পরিচয়কে প্রাধান্য দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে দিচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি জব্দ বা বাতিল করে।
সবশেষ গত সোমবার ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও জাতিগত হয়রানির অভিযোগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ছয় কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা মন্ত্রণালয় (এইচএইচএস) ।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি হতাশা সৃষ্টি হয়।
সারাহ ডেভিস নামের অস্ট্রেলিয়ান এক শিক্ষার্থী বিবিসি নিউজআওয়ারকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছেন আমার মতো অনেকেই।
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অস্টেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ককাসের প্রেসিডেন্ট এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অনেকেরই স্নাতক হওয়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে খবরটি এলো এবং পরিষ্কারভাবেই এতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে এবং এখানে কাজ করতে পারব কিনা, সেটি অনিশ্চিত হয়ে গেল।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com