পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য
প্রকাশ : ০৮-০৯-২০২৫ ১০:৪৯

ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
মহাজগতের প্রতিটি বিষয় ভাবনার উদ্রেক করে। বলা চলে বিশ্ব ভ্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্র একটি বস্তু চাঁদ। এটিকে নিয়েই মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চাঁদ তার মায়াবী আলোয় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে অনন্তকাল। কবির ভাষায়, যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হলো তার সাধ। আবার আরেক কবির চোখে, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। ধর্ম-সংস্কৃতিসহ নানা আবহের মধ্যেও জড়িয়ে আছে চাঁদ। কবিতা, বিজ্ঞান, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে হাজার বছর ধরে ভিন্ন আবহ তৈরি করেছে পৃথিবীর এ নিকটতম প্রতিবেশী। নিজস্ব আলোহীন চাঁদ বছরের নানা সময় হাজির হয় নানা রঙে। চাঁদের দুটি রূপ– একটি পূর্ণিমার ঝলমলে রুপালি আলো, আরেকটি অমাবস্যার ঘন কালো। কখনো লালসহ নানা রঙেও দেখা যায় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহকে।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকার আকাশে দেখা গেল এক ভিন্ন দৃশ্য। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণে কালচে লাল রঙে ধরা দিল চাঁদ। ঢাকার অনেক বাসিন্দা চাঁদের এই রূপ দেখেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ সময় রবিবার রাত ৯টা ২৭ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয় রাত সাড়ে ১১টায়। রাত ১২টা ১১ মিনিটে শুরু হয় কেন্দ্রীয় গ্রহণ। পূর্ণ গ্রহণ থেকে চাঁদের নির্গমন শুরু হয় রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে। গ্রহণ থেকে চাঁদ সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে স্বাভাবিক রূপে ফেরে রাত ২টা ৫৬ মিনিটে।
রাতে চন্দ্রগ্রহণের শুরুতে আকাশে চাঁদ আংশিক ঢাকা দেখা যায়। একপর্যায়ে মধ্যরাতে সেটি কালচে লাল রং ধারণ করে।
এর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, পূর্বে ইন্দোনেশিয়ার হিলা দ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমে কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দর পর্যন্ত এলাকা থেকে চন্দ্রগ্রহণটি পূর্ণাঙ্গভাবে দেখা যাবে। এ দুই প্রান্তের কিছুটা পূর্ব-পশ্চিমেও আংশিক চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে।
এদিকে ঢাকায় ব্লাড মুন দেখতে ছিল নানা আয়োজন। ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে বিশেষ আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। এখানে আগ্রহীরা টেলিস্কোপ দিয়ে চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করেন। এ ছাড়া জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর বিজ্ঞান বক্তৃতা ও টেলিস্কোপ দিয়ে চন্দ্রগ্রহণ দেখার আয়োজন করেছিল।
এদিকে বিশ্বজুড়ে ব্লাড মুন দেখেছে কোটি মানুষ। ভারতের আকাশজুড়েও স্পষ্ট দেখা গেছে চন্দ্রগ্রহণ। দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ আর চেন্নাইসহ দেশটির প্রায় সব বড় শহর থেকেই আকাশপ্রেমীরা উপভোগ করেন চন্দ্রগ্রহণের প্রতিটি ধাপ। কেউ বাসার ছাদে বসে, অনেকের হাতে ছিল টেলিস্কোপ আর ক্যামেরা, কেউ আবার মোবাইলের স্ক্রিনেই ধরে রেখেছেন মহাজাগতিক এই খেলা।
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশেও দারুণভাবে ধরা দিয়েছে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। ভিড় জমে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে। দুবাইতে আয়োজন করা হয় বিশেষ ক্যাম্প, যেখানে চাঁদ আর বুর্জ খলিফার একই ফ্রেমে ছবি তোলেন আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফাররা। অন্যদিকে জেরুজালেমের পুরোনো শহরের ঐতিহাসিক প্রাচীর ঘিরে দেখা গেছে লালচে আভায় মোড়া চাঁদের অসাধারণ দৃশ্য।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার আকাশে ধরা পড়ে চন্দ্রগ্রহণের এক অনন্য দৃশ্য। ক্যামেরার ফ্রেমে দেখা যায়, লালচে আভা মণ্ডলে মোড়ানো চাঁদের সামনে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিমানের অবয়ব। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির আকাশেও দেখা গেছে এ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।
তবে এ সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন উত্তর আমেরিকার বাসিন্দারা। তাদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত। অন্যদিকে জাপানে প্রায় তিন বছর পর দেখা মেলে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের।
গ্রহণ ঘিরে নানা কুসংস্কার থাকলেও এ দৃশ্যকে ভয়ের নয়, বিস্ময় হিসেবেই দেখছেন জ্যোতির্বিদরা। অনেক দেশে আবার বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় গ্রহণ ঘিরে।
পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ: এই সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের সবটা ঢেকে ফেলে। চিরচেনা চাঁদ এ সময় ধীরে ধীরে রুপালি থেকে কালচে লাল রং ধারণ করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভাষায় একে বলে ‘ব্লাড মুন’। রবিবার রাতে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণটি টানা ৮২ মিনিট স্থায়ী হয়। ২০২২ সালের পর এটিই দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়।
চন্দ্রগ্রহণের সময় কী হয়: চন্দ্রগ্রহণ যখন ঘটে, তখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে চলে আসে। এতে চাঁদের ওপর পৃথিবীর ছায়া পড়ে। চাঁদ যখন পৃথিবীর সেই ছায়ায় প্রবেশ করে, তখন এর পরিচিত রুপালি আভা ধীরে ধীরে তামাটে বা লালচে রঙে বদলে যায়। তখন চাঁদের কক্ষপথ একটু হেলে থাকে। তাই প্রতি পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণ হয় না। বছরে মাত্র দুই বা তিনবার দেখা যায় চন্দ্রগ্রহণ। পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে চাঁদের এই বিরল রূপ দেখা যায়।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com