পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন বেশি হওয়ার রহস্য কী
প্রকাশ : ০৯-০৯-২০২৫ ১১:৫০

ছবি : সংগৃহীত
পিপলসনিউজ ডেস্ক
পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্সিজেন অপরিহার্য উপাদান। তবে পৃথিবী গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত কম। কোটি কোটি বছরের ব্যবধানে ধীরে ধীরে এর মাত্রা বেড়েছে এবং আজকের সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল তৈরি হয়েছে। এই রহস্যময় পরিবর্তনের নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে নেচার জিওসায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি ক্রমশ ধীর হয়ে আসার ফলেই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এর ঘূর্ণনগতি ক্রমশ ধীর হচ্ছে। চাঁদের মহাকর্ষীয় টান এই ধীরগতির প্রধান কারণ। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রায় ১৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর একদিনের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ১৮ ঘণ্টা। আজকের দিনে সেটি ২৪ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। এই দীর্ঘ দিনের প্রভাবেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে।
গবেষকরা সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামের একধরনের অণুজীব নিয়ে গবেষণা করেছেন। এরা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন করে। প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া ‘দ্য গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট’-এর পেছনে মূল চালিকা শক্তি ছিল এই সায়ানোব্যাকটেরিয়া। ওই সময়ে অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎ করেই ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সায়ানোব্যাকটেরিয়া শুধু সূর্যালোকের ওপর নির্ভর করে না। তাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন হয়। সূর্যোদয়ের পর অক্সিজেন তৈরি শুরু করতে তাদের প্রস্তুতি নিতে হয়। যদি দিনের দৈর্ঘ্য কম হয়, তবে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় তারা যথেষ্ট অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ব্রায়ান আরবিক ও তার দল এ বিষয়ে গভীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। তারা সায়ানোব্যাকটেরিয়ার কার্যকলাপের ওপর দিনের দৈর্ঘ্যের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে একটি মডেল তৈরি করেন। পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার হুরন লেকের মাইক্রোবিয়াল ম্যাটও পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সায়ানোব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন তৈরি করে এবং একই সঙ্গে সালফারভিত্তিক জীবাণুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। দিনের দৈর্ঘ্য যত বাড়তে থাকে, অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য তাদের সময় তত বাড়ে।
এই গবেষণায় উঠে এসেছে ‘অক্সিজেন উইন্ডো’ ধারণা। অর্থাৎ, দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ার ফলে অক্সিজেন উৎপাদনের নির্দিষ্ট সময়সীমাও বেড়ে যায়। এতে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
বিজ্ঞানীরা জানান, পৃথিবীর ইতিহাসে শুধু দ্য গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট-ই নয়, বরং ৫৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া ‘নিওপ্রোটেরোজোইক অক্সিজেনেশন ইভেন্ট’-এর সময়ও এই একই প্রভাব দেখা গেছে। উভয় ক্ষেত্রেই দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি অক্সিজেন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গবেষণার সহলেখক বিজ্ঞানী অর্জুন চেন্নু মন্তব্য করেন, এই গবেষণা পৃথিবীর ভৌত পরিবর্তনকে অণুজীবের জীবনধারার সঙ্গে আণবিক স্তরে যুক্ত করেছে। পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি ধীর হওয়ার সঙ্গে চাঁদের মহাকর্ষীয় প্রভাব মিলিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে আমরা আজ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছি।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com