সাতক্ষীরার আয়ান রুহাব যেভাবে দেশের প্রথম ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ শিশু
প্রকাশ : ২৪-১০-২০২৫ ১৮:২৭
ছবি : সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ শিশু হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শিবপুর গ্রামের শিশু আয়ান খান রুহাব। মাত্র আট মাস বয়সেই এই বিশেষ স্বীকৃতি অর্জন করেছে রুহাব।রুহাবের বাবা ইমরান রাব্বি, পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনম্যানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং মা আয়শা আক্তার কিরণ সংগঠনটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।
কিন্তু কীভাবে আয়ান রুহাব ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ শিশু হলো? চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রুহাবের জন্ম। তার জীবনব্যাপী কার্বন নিঃসরণ অফসেট করতে সেপ্টেম্বর মাসে আয়ানের বাবা-মা সাতক্ষীরার শিবপুর গ্রামে ৫৮০টি ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করেছেন। রোপিত গাছের মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, আমড়া, সুপারি ও নিম।
এই উদ্যোগের স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)। সংস্থার গ্রান্টজয়ী প্রকল্প ঢাকা প্ল্যান্টারস’র আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে রুহাবকে বাংলাদেশের প্রথম কার্বন-নিউট্রাল শিশু হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
ভাবা যায়, একটি শিশুর সঙ্গে বড় হবে প্রায় ৬০০ গাছ। দীর্ঘ হবে ছায়া, বাড়বে অক্সিজেন। কোনোটি মরে গেলে বা কেউ উপড়ে ফেললে আরেকটি নতুন গাছ লাগানো হবে। এর আগে বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু হিসেবে স্বীকৃতি পায় ভারতের তামিলনাড়ুর দুই বছরের শিশু আদাভি। তামিলনাড়ুর কৃষকদের সহায়তায় আদাভির জন্মের অনেক আগে থেকেই প্রায় ছয় হাজার ফলের গাছ লাগিয়েছিলেন তার মা-বাবা। কার্বন-নিরপেক্ষ মানুষ মানে কোনো ব্যক্তি বাতাসে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করেন, সেই পরিমাণ কার্বন শোষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মা-বাবা প্রায় ছয় হাজার গাছ লাগিয়ে কার্বন শোষণের যে ব্যবস্থা করেছেন, তার স্বীকৃতি হিসেবে আদাভিকে বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু অভিধা দেয় এশিয়া বুক অব রেকর্ডস।
শিশু আয়ানের মা আয়শা আক্তার বলেন, সন্তানের প্রাকৃতিক সুরক্ষার কথা ভেবে গাছ লাগানোর ভাবনা মাথায় এসেছে। এমন নয় যে গাছ লাগানো এখানেই শেষ। গাছের সংখ্যা আরো বাড়বে।
মা আয়শা আক্তার বলেন, আমাদের ছেলের জন্য গাছ লাগিয়েছি আমরা, কিন্তু তা সব শিশুদের জন্যই উপকারে আসবে। আপনি চাইলে আপনার পরিবারের নতুন সদস্য এলে কিছু গাছ লাগিয়ে ফেলতে পারেন, যা তার ভবিষ্যৎকে সুন্দর করবে।
শিশু আয়ান খানের বাবা ইমরান রাব্বী ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড়ে প্রতিবছর কার্বন নিঃসরণের যে হার, তাতে প্রত্যেকের জন্য অন্তত ৫৪টি করে কাঁঠালগাছ লাগানো প্রয়োজন। সেই হিসাব থেকে তিনি বাচ্চার জন্য গাছ লাগানোর চিন্তা করেছিলেন। সেটা পরে ৫৮০টিতে গিয়ে পৌঁছায়।
বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর একজন মানুষ গড়ে শূন্য দশমিক সাত টন কার্বন নিঃসরণ করেন। ইমরান রাব্বীর হিসাবে এই পরিমাণ কার্বন শোষণ করতে পারে ৫৪টি কাঁঠালগাছ।
আয়ানের বাবা ইমরান রাব্বী জানান, এই গাছগুলোই তার সন্তানকে দিন শেষে বিশেষ সহায়তা দেবে বলে তার বিশ্বাস।
পিপলসনিউজ/আরইউ
-- বিজ্ঞাপন --
CONTACT
ads@peoplenewsbd.com